A soul in tension... that's learning to fly Condition grounded... but determined to try
Tuesday, 27 February 2007
Paris Travelogue
২৩শে ডিসেম্বর প্রসেনজিত , হিমাদ্রি, অভ্রদা ও তার বউ সংগীতা আর আমি রওনা হলাম প্যারিসের উদ্দেশ্যে। আমরা অফিস থেকে বেশ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়েছিলাম। সিটি সেন্টার থেকে লন্ডনের বাসে প্রথমে গেলাম লন্ডন। সেখানে একটা য়ুথ্ হস্টেলে উঠলাম। সকাল ৫:৩০ এ আমাদের পিক্আপ ছিল, তাই ৪:০০ এতে ট্যাস্কি বোলে রাখা ছিল। ভোর বেলা ঠান্ডার মধ্যে রেডি হয়াটা বেশ চাপের কাজ। অনেক কষ্ট করে শেষবেশ বাস স্ট্যান্ড এ এলাম। আমরা একটা দোতলা বাসে প্যারিস ঘুরেছি। বাসটা লন্ডন থেকেই আমাদের সঙ্গে সঙ্গে ছিল। বাসে করে প্রথমে আমরা ডোভার গেলাম। ডোভারের পথে অনেক সুন্দর দৃশ্য আমার দেখা হল না। অত সকালে উঠে আর জেগে থাকতে পারছিলাম না। ডোভার হল ইংল্যান্ডের দিকের ইংলিশ চ্যানেলের একটা বন্দর। সেখান থেকে বড় বড় ফেরি ছাড়ে। আমাদের বাসটা একটা বড় ফেরি নৌকায় উঠিয়ে দিল। সেটায় করে আমরা ইংলিশ চ্যানেল পার করে পঁৌছলাম ক্যালে, ফ্রান্সের বন্দর। আমাদের সঙ্গে যারা ছিল প্রায় সকলেই ভারতীয়। সেরম ভাবে কারুর সঙ্গেই আলাপ হয় নি, আমরা আমাদের নিয়েই ছিলাম। ক্যালেতে ভেবেছিলাম হয়ত আমাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইবে কিন্তু তা নয়। পরে জেনেছিলাম যে ফ্রান্সে প্রবেশের সময় পরিচয়পত্র দেখাতে হয় না, বেরনোর সময় দেখাতে হয়। ফ্রান্সে প্রথমেই যেটা চখে পড়ল তা হল যে ওখানকার সব গাড়িরই লেফ্ট হ্যান্ড ড্রাইভ আর রাস্তায় গাড়িগুলো উল্টোদিকে চলছে। ভেবে নাও আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তায় বঁাদিক থেকে ডানদিকে গাড়ি যাচ্ছে, তাহলে যেরম অদ্ভুত লাগবে ঠিক সেরম অদ্ভুত। ইংল্যান্ডেই বল বা ফ্রান্সে, এখনও অবধি কোনো গিড়িকেই হর্ন দিতে শুনি নি। এত ভদ্রভাবে এখানে লোকজন গাড়ি চালায় যে হর্ন দিতে হয় না। ওভারটেকিঙ্গের জন্য পরিষ্কার নিয়ম আছে। ইংল্যান্ডে যদি সিংগ্ল লেন রাস্তা হয় তাহলে ওভারটেক করা চলবে না। দুটো বা বেশি লেনের রাস্তা হলে সবসময় ডানদিক দিয়ে ওভারটেক করতে হবে। শুধু তাই নয় যদি তুমি দেখ যে অনেক দুর অবধি কোনো গাড়ি তোমার সামনে নেই তাহলে তোমায় আবার বঁাদিকে চলে আসতে হবে যাতে তোমার পেছনের গাড়ি তোমায় ওভারটেক করতে পারে। ফ্রান্সে অবশ্য পুর ব্যাপারটাই উল্টো, যেন একটা আয়নার মধ্যে দিয়ে দেখছ। ক্যালে থেকে আমাদের বাস রওনা দিল প্যারিসের দিকে। সবমিলিয়ে বাসে লেগেছিলো ১০:০০ ঘন্টা লন্ডন-প্যারিস তাতে ৫ ঘন্টা শুধু ক্যালে থেকে প্যারিস। বাসে ভিডিও দেখাবার ব্যাবস্তা ছিল। নতুন ডন সিনেমাটা দেখলাম। মাঝে বাসটা একটা হটেলে থেমেছিলো সেখানেই দুপুরের খাওয়া খেয়ে নিলাম। ফ্রান্সে আসার পর ওই প্রথম ভাষা নিয়ে অসুবিধায় পড়েছিলাম। ইংরাজিও বঝে না। ইশারায় কাজ সারতে হলো। খাওয়া দাওয়ার পরে আর একটা সিনেমা দেখলাম, ধূম-২। প্যারিস পঁৌছলাম প্রায় বিকেল ৫টা নাগাত। প্যারিসের সময় আবার ইংল্যান্ডের সময় থেকে এক ঘন্টা এগিয়ে সুতরাং প্যারিসে তখন বাজে ৬টা। হটেলে ব্যাগপত্র রেখেই বেরিয়ে পড়তে হল ডিনার খেতে। আমরা যে ট্যুরের সঙ্গে গিয়েছিলাম তাজ ট্যুর, সেই গাইড আবার রেস্তরঁাটা চেনে না। সে এক কান্ড। ১ঘন্টা এদিক ওদিক ঘুরে শেষে সে একটা ট্যাস্কি ঠিক করল। ট্যাস্কিটা বাসটাকে চিনিয়ে চিনিয়ে রেস্তরঁাতে নিয়ে গেল। ২৪শে ডিসেম্বরের রাতে প্যারিস যা লাগছিলো তা ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না। এত ঝলমলে শহর আর এত লাইটিং যে চোখ ধঁাধিয়ে যায়। প্যারিসে যে রাস্তার দুধারে গাছ আছে সেই রাস্তাগুলোর নাম হল এভিনিউ যেমন ধর রাশবীহারি এভিনিউ, আর যে রাস্তার ধারে গাছ নেই সেগুলোর নাম হল রোড। এভিনিউগুলো দিয়ে গেলেই চোখে পড়বে অবিস্বাশ্য লাইটিং। সমস্ত গাছে ছোট ছোট লাইট দিয়ে ডালগুলো সাজানো। রাস্তার উপরে আলোর ঝালড়। সে যেন দূর্গাপুজোর লাইটিং আর তুমি যেন একডালিয়া এভারগ্রীনে পুজো দেখতে বেরিয়েছো। এরই মধ্যে বাটার একটা দোকান দেখে বেশ মজা লাগল। মনে হয়েছিল যেন চদ্দ নং বাসস্ট্যান্ড থেকে বাড়ির দিকে ফিরছি। রেস্তরঁাতে যাওয়ার পথে একঝলক আইফেল টাওয়ার দেখলাম। প্রানে যেন একটা অদ্ভুত আনন্দ হল। কত সিনেমায় দেখা সেই অদ্ভুত টাওয়ারটা সত্যি সত্যি যে কত সুন্দর তা হয়ত ছবিতে বোঝা যায় না। রাতের প্যারিসের আকাশসীমায় সে যেন এক সোনার জ্বলজ্বলে বিশাল তরবারি। চারিদিকের বড়দিনের সজ্জা আর তার সঙ্গে আইফেল টাওয়ার মিলে যেন অকটা রূপকথার জগত্। সন্ধ্যা ৬:৩০শে আমাদের ডিনার বুক করা ছিল সেখানে রাস্তা গুলিয়ে ঘুরে টুরে আমরা শেষ বেশ ৮:০০টার সময় রেস্তরঁাতে পঁৌছলাম। রেস্তরঁাটা ভারতীয় খাবার দাবার বানায়। খাবারের ব্যাবস্থা বেশ ভালই ছিল। সব্জি, নান, পোলাঊ, মুর্গি,ডাল ও শেষে আইসক্রিম। ভালো করে ঠঁেশে খেয়ে আমরা আবার বেরিয়ে পড়লাম আইফেল টাওয়ারের উদ্দেশ্যে। প্যারিস নিয়ে অনেক কথা লেখা যায়, এরম সুন্দর শহর আগে কখনো দেখার সৌভাগ্য হয় নি। সাধারন বাড়ি গুলোও যেন পৌরানিক যুগের কনো দারুন শিল্পীর হাতে বানানো। শহরের সবকিছুই যেন শিল্প। ছবি দেখে কতটা বুঝতে পারবে তা বলা শক্ত, হয়ত অনেকটাই বুঝবে না। চোখের দেখা আর ছবিতে দেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য। চিন্তা কোরো না সুযোগ সুবিধেয় থাকলে তোমাদেরকেও হয়তো প্যারিস ঘুরিয়ে দেখাবো এটাই আমার ইচ্ছে। ঠিক আইফেল টাওয়ারের সিমনেই বয়ে চলেছে Seine(শেন) নদী। সেটায় সকাল থেকে রাত ১টা অবধি ক্রুজ ট্যুর হয়। আমরা রাত ১১টার ট্যুরটা নিয়েছিলাম। আইফেল টাওয়ারের সিমনেই জেটি থেকে আকাশ খোলা একটা বড় ক্রুজ নৌকায় আমরা উঠলাম। শেন নদীর ছবি হয়ত দেখবে এবং বুঝতেই পারবে যে নদীটা বেশি চওড়া নয়। সমুদ্রতল থেকে মাত্র ২৪ মিটার উচুতে বয়ে চলার জন্য নদীটা বেশ শান্ত। নদীটার উপর অসঙ্খ ব্রিজ। সবকটা ব্রিজই আর্চ করা আর প্রত্যেকটাই সুন্দর। প্রত্যেকটারি কোন না কোন ইতিহাস আছে। আর্চ-এর পিলার গুলোয় পাথরের উপর সুন্দর সুন্দর নক্সা করা। নদীর ধারেই সমস্ত বিখ্যাত বিখ্যাত সৌধ, মিউসিয়াম, চার্চ। ক্রুজ ট্যুর শুরু হওয়ার এক মিনিটের মধ্যেই হঠাত্ আইফেল টাওয়ারের রূপ একেবারে পাল্টে গেল। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য, যেন আইফেল টাওয়ারের গায়ে অসঙ্খ যোনাকী পোকা লেগে রয়েছে। ঝিলমিল করছে আইফেল টাওয়ার। অসঙ্খ ক্যামেরার ফ্ল্যাশের মত আলো জ্বলেই নিবে যাচ্ছে পুরো টাওয়ারের গা জুড়ে। আমরা হৈহৈ করে ছবি তুলতে লাগলাম। প্রসেনজিত আর হিমাদ্রি দুজনেই ভিডিও তুলেছে। কাজলের হাতে আমি যে ডিভিডি টা পাঠাবো তাতে ভিডিওগুলোও আছে। নদীপথে যেতে যেতে বঁাদিকেই পড়ল Grand Palais (গ্র্যান্ড প্যালেস) আর Petit Palais (পেটিট প্যালেস)। এক সময় গ্র্যান্ড প্যালেস ছিল প্যারিসের মিলিটারি বেস এখন এটা একটা মিলিটারি মিউসিয়াম, পেটিট প্যালেসও এখন এটা একটা মিউসিয়াম। নদীর উল্ট তীরেই হল Esplanade des Invalides (ইনভ্যালিদেস্ মোড়) এবং Hotel des Invalides (ইনভ্যালিদেস্ প্যালেস যেটা এখন একটা হটেল)। একটু এগিয়েই বঁাদিকে পড়ল Champs Elysees (শঁৌঔ দে-লিসে)। এই শঁঁৌঔ দে-লিসে জায়গাটা ঠিক ময়দানের মত, Fort William থেকে ধর্মতলা যেতে যদি ধরে নাও রেড রোড দিয়ে যাচ্ছো আর দুপাশে বড় বড় গাছ, রেড রোড যেখানে শেষ সেখানে যদি একটা ইন্ডিয়া গেট থাকে (Arc de Triomphe আর্ক দি-ট্রায়াম্ফ্), সেরম খানিকটা। আবার যেখানে রেড রোড শুরু সেখানে ধর্মতলার মনুমেন্টের মত দেখতে Obelisque (ওবেলিষ্ক), একটা ২০-২২ মিটারের প্রস্তর খন্ড যেটা গ্রীসের রাজার ফ্রান্সকে উপহার। একটু এগিয়ে বঁাদিকে Musee du Louvre (লুভ্ মিউসিয়াম) আর ডানদিকে Musee d'Orsay (অর্সা মিউসিয়াম) আর Assembly Nationale (বিধান সভা)। নদীপথে আরও খানিকটা এগিয়ে বঁাদিকে হল Saint Michele Notre Dame (নটার ডেম)। এখানথেকে অমাদের নৌকটা ঘুরলো। নটার ডেম একটা ব দ্বীপের উপর। অমাদের নৌকটা সেই ব দ্বীপের ওপাশ দিয়ে ঘুরে ফিরল। ব দ্বীপের ওপাশের তীরে পড়ল Hotel de Ville (ভিল প্যালেস যেটা এখন একটা হটেল)। দেখতে দেখতে কখন এক ঘন্টা কেটে গেছে টেরও পাই নি। রাত ১২:১০ এ আবার আমরা আইফেল টাওয়ারের সামনের জেটিতে ফিরে এলাম। ঠান্ডায় হাতপা জমে যাচ্ছিল আর কুয়াশার জন্য আইফেল টাওয়ারের চঁুড়াটা দেখা যাচ্ছিল না। সেদিন আর কিছু দেখি নি। হটেলে ফিরে গরম জলে চান করে শুতেশুতেই ঘুম। সকালে ব্রেকফাস্ট হটেলেই দিয়েছিল। পঁাউরুটি, জ্যাম, মাখন, চিজ, ফলের রস, চা, কফি, দুধ, কর্নফ্লেক, হ্যাম ও বেকন্ স্লাইস। দেড়েমুষে খেয়ে অমরা অবার বাসে করে বেরিয়ে পড়লাম, দিনের বেলায় আইফেল টাওয়ার দেখতে। সেখানে পঁৌছে আমরা আইফেল টাওয়ারের দর্শন পেয়ে মহিত হয়ে গেলাম। একটা পায়ের থেকে অন্য পায়ের দুরত্ব প্রায় ১৫০ ফুট। আমাদের বাড়ির দরজা থেকে ওপারের তেলেভাজার দোকান যতখানি, প্রায় ততটা। আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা ১২০ মিটার। ঠিক ১৫০ মিটার পেছনে হল Champs de Mars (শঁৌঔ দে-মার), একটা মিলিটারি স্কুল। ১৫০ মিটার পেছনে থাকার কারন:- যদি কোনদিন আইফেল টাওয়ার পড়ে যায় তাহলে যেন স্কুলটা বঁেচে যায়। আইফেল টাওয়ার তিনটে ভাগে বিভক্ত, চারটে পা থেকেই লিফ্ট উঠেছে দোতলা অবধি। এখন শুধু উত্তর দিকের পায়ের লিফ্টটাই চালায়। প্রথম তলায় একটা বড় রেস্তরঁা আছে। অত্যন্ত দামি। দোতলায় কয়েকটা দোকান আছে, ছবি, ম্যাপ ইত্যাদি বিক্রি করে। আমরা একেবারে দোতলায় চলে গেলাম। সেখান থেকে আবার আরেকটা লিফ্টে গেলাম একেবারে উপরের তলায়। পুরো প্যারিস শহরটা একটা প্রকান্ড ম্যাপের মত দেখাচ্ছিল উপর থেকে। আমরা অনেক ছবি তুল্লাম। দোতলা ও একতলা থেকেও ওনেক ছবি তুলে অমরা সকাল ১২:৩০ নাগাথ রওনা দিলাম (Château de Versailles)ভারসাই প্যালেসের উদ্দেশ্যে। ভারসাই প্যালেস পঁৌছলাম যখন তখন প্রায় ১:০০। মনে পড়ে মাইশোর প্যালেস? এটা সেটার থেকে প্রায় তিনগুন। প্যালেসটাতে ১০০০টা থাকার ঘর আছে আর প্যালেসের পিছনের মাঠটার কোন শেষ দেখা যায় না। প্যালেসের নিজস্ব একটা জঙ্গল আছে যেখানে রাজারা শিকার করতে যেত। এই প্যালেস মিত্তাল ভাড়া করেছিল মেয়ের বিয়েতে !!! লোকের কত টাকা হলে সেটা করতে পারে তাই ভাবি। আমরা প্যালেসের একটা গাইডেড ট্যুর নিয়েছি। প্যালেসের এক একটা ঘরের এক একটা গল্প। সেসব লিখতে পারলাম না, একটা গোটা উপন্যাস হয়ে যাবে। ৩:৩০ নাগাধ আমরা অকটা দোকান থেকে একটা করে বড় বার্গার খেয়ে দুপুরের খাওয়া সেরে ফেল্লাম। প্যারিস ফিরতে ফিরতে ৬:০০ বেজে গেল। এবার আর ভুল না করে আমাদের গাইড সোজা সেই ইন্ডিয়ান হটেলে নিয়ে গেল। আগের দিনের মত ঠঁেশে খাওয়া দাওয়া করে আমরা ৮:০০ নাগাথ বাসে করে প্যারিসের বিভিন্ন যায়গা ঘুরতে লাগলাম। প্রথমেই যাওয়া হল Champs de Mars (শঁৌঔ দে-মার)। সেখানে আমরা নেমে ছবি তুল্লাম। আইফেল টাওয়ারের আরেকবার দর্শন হয়ে গেল। তারপর আমরা গেলাম Invalides (ইনভ্যালিদেস্ প্যালেস যেটা এখন একটা হটেল)। এখানেও নেমে অমরা ছবি তুলেছি। তারপর যাওয়া হল Ritz Hotel (রিজ্ হটেল)। এই হটেলেই ডায়না তার জীবনের শেষ রাত কাটিয়েছিল। হটেলের ঠিক সামনে একটা চৌক মত জায়গা বরং বলতে পারো যে হটেলটা একটা চৌক মত জায়গার এক কোনে। সেই জায়গাটাতে নেপলিয়ন-এর স্ট্যাচু রয়েছে। এখানেও নেমে অমরা ছবি তুলেছি। তারপর আমরা গেলাম Palais de Chaillot (শ্যালো প্যালেস)। এখান থেকে আইফেল টাওয়ারের সবথেকে সুন্দর ভিউ পাওয়া যায়। সেখানে ক্ষনিক সময় কাটিয়ে আমরা গেলাম Arc de Triomphe আর্ক দি-ট্রায়াম্ফ্ । এখানে Gateway of India র মত অকটা সৌধ আছে। এটা আবার প্যারিসের সবথেকে ব্যাস্ত মোড়। ১০টা রাস্তা এখানে মিশেছে (খানিকটা শ্যামবাজারের মত)। নেপলিয়নের উদ্দেশ্যে তৈরি এই সৌধের মাঝখানে অকটা আগুন সবসময় জ্বলে। যদি Day of the Jackal সিনেমাটা দেখে থাকো তাহলে এটা সেই জায়গা যেখানে চার্লস্ দি গলকে মেরে ফেলার কথা ছিল। একটা জিনিস দেখে বেশ তাজ্জব হয়ে গেলাম যে ঐ মোড়ে কোনো ট্রাফিক সিগনাল নেই যেটা ঠিক করে দেবে কোন রাস্তার গাড়ি কোথা দিয়ে যাবে। সেখান থেকে আমরা সেদিনের মত ঘোরার শেষ ঠিক করে হটেলের পথে পাড়ি দিলাম। রাস্তায় লুভ্ মিউসিয়ামের একবার দর্শন পেলাম। সব ছবি তোলা আছে। পরের দিন সমস্ত দিনটা আমরা প্যারিসের ডিসনিল্যান্ডেই কাটালাম। সকালে যথা রীতি গান্ডে পিন্ডে ব্রেকফাস্ট করে নিয়েছিলাম কারন সেদিন আর ডিনারের ব্যবস্থা ছিল না। ডিসনিল্যান্ডে আনন্দ প্রচুর হয়েছে। নানারকম রাইড ছিল। নিক্কো পার্কের মত জায়গা তবে একটা বেহালার মত বড় জায়গা জুড়ে এই যা তফাত। দুপুরে এখানেই বার্গার খেয়ে খিদে মিটিয়ে নিলাম। পুরো পার্কটা দেখতে দেখতেই রাত ৯:০০ বেজে গেল। আমরা একটা ছোট রেস্তরঁাতে রাতের টুক টাক খাওয়া সেরে আমরা হটেলে ফিরে এসেছিলাম। পরের দিন ফেরার কথা। সকালে খানিকটা সময় ছিল তাই সকাল সকাল একটা প্রকান্ড ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা গেলাম Saint Michele Notre Dame (নটার ডেম) দেখতে। ২৬শে ডিসেম্বর বলে নটার ডেম চার্চ বন্ধ ছিল। আমরা বাইরে থেকেই ছবি তুল্লাম। তখন বাজে প্রায় ৯টা। সেখান থেকে আমরা গেলাম Musee du Louvre (লুভ্ মিউসিয়াম)। লুভ্ মিউসিয়ামও বন্ধ ছিল তাই আমাদের আর মোনা লিসার সেই বিখ্যাত ছবি আর দেখার সৌভাগ্য হল না। মিউসিয়ামটা এতই বড় যে লোকে বলে পুরোটা দেখতে গেলে ৭ দিন লেগে যাবে। আমরা বাইররে থেকেই ছবি-টবি তুল্লাম। লুভের সেই বিখ্যাত কঁাচের পিরামিডের ছবিও তুলেছি। লুভের তলায়, মানে বেসমেন্টে অনেকগুলে খাবারের দোকান ছিল। সেখান থেকে আমরা ফ্রেন্চ ফ্রাই আর অকটা করে বড় বার্গার কিনে নিলাম দুপুরের খাবার হিসেবে। বেলা ১২:০০ নাগাথ আমরা ফেরার পথে রওনা হয়ে পড়লাম। সেবারের মত শেষ বার আইফেল টাওয়ারের দৃশ্য দেখে নিয়ে প্যারিসকে জানালাম বিদায়। ক্যালেতে পঁৌছলাম সন্ধ্যা ৬টা নাগাথ। সেখানে ইমিগ্রেশন্ হল। আমাদের পাসপোর্টে ফ্রান্সের ভিসার ছাপ পড়ল। আবার সেই একি রকম লন্চে করে আমরা ডোভার পঁৌছলাম। আমি ডোভারের থেকে লন্ডনের পথে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। লন্ডন পঁৌছলাম রাত ১০:৩০ নাগাথ। প্যারিস যাওয়ার সময় যে য়ুথ্ হস্টেলে উঠেছিলাম সেইখানেই আমাদের বুকিং ছিল। বাস স্ট্যান্ড থেকে ট্যাস্কি নিয়ে সেই য়ুথ্ হস্টেলেই উঠলাম। আমরা সবাই একদিনের ছুটি নিয়েছিলাম, পরের দিন তাই প্ল্যান করা হল গ্রিনউইচ্ ঘুরে আসা হবে। এই গ্রিনউইচ্ দিয়েই আমাদের পৃথিবির মুখ্য দ্রাঘিমা রেখা (Prime Meridian Longitude 0 degree) যায়। সকাল সকাল বেরিয়ে আমরা প্রথমে গেলাম সেন্ট্ পলস্ ক্যাথেড্রাল চার্চ। সেটার সঁিড়িতে বসা অবস্থায় আমার একটা ছবি পাবে। তারপর সেখান থেকে আমরা গেলাম লন্ডনের বিখ্যাত টাওয়ার ব্রিজ দেখতে। ব্রিজের পাশেই লন্ডন টাওয়ার, একটা পৌরানিক ক্যাসেল্। সেখান থেকে আমরা একটা লন্চ নিয়ে আমরা টাওয়ার ব্রিজের নিচ দিয়ে পাড়ি দিলাম গ্রিনউইচের উদ্দেশ্যে। এখানে অবশ্য নদীপৃষ্ঠে সেরম দেখার কিছু ছিল না। গ্রিনউইচে পঁঁৌছে আমরা গেলাম গ্রিনউইচ্ মুখ্য দ্রাঘিমা অবসারভেটরি। সেরম কিছু দ্রাষ্টব্য ছিল না ঔ অবসারভেটরি থেকে একটা লেসার বিম বেরোয় মুখ্য দ্রাঘিমা রেখার প্রতিক হিসাবে, সেটার ছবি তুল্লাম। ফিরতে ফিরতে ৫:৩০ বেজে গেছিল। আমরা য়ুথ্ হস্টেল থেকে আমাদের জিনিষপত্র নিয়ে চলে গেলাম ভিক্টরিয়া কোচ স্টেশন। সেখান থেকে ৬:৩০এর বাসে করে ব্রিস্টল ফিরে এলাম রাত ১০:০০ নাগাথ।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment